ইতিহাস নতুন করে লিখেই চলেছে বাংলাদেশ
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৩০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়ে স্বস্তিতে থাকার সুযোগ ছিল না কোনোভাবেই। এর আগে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আগে ব্যাটিং করে এর চেয়ে কম রানের সংগ্রহ নিয়েও ৪টি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। সে চার ম্যাচের দুটি ছিল আবার ঘরের মাঠ মিরপুরে। আর মিরপুরের উইকেটের চরিত্র কারো অজানা নয়। অন্যদিকে দেশের বাইরে জেতা বাকি দুটো ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিল নেপাল ও মালয়েশিয়া (এশিয়ান গেমস)।
তাই উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে এমন ‘ছোট্ট’ সংগ্রহ নিয়ে জয়ের চিন্তা করাটা কঠিনই ছিল। তবে সে কঠিন কাজটাকে সহজ করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। উইন্ডিজকে ১০২ রানে অলআউট করে ২৭ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজও নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশ।
এবারের উইন্ডিজ সফরে ইতিহাস যেন নতুন করেই লিখছে বাংলাদেশ। টেস্টে উইন্ডিজের মাটিতে দীর্ঘ ১৫ বছর পর উইন্ডিজকে এবারের সফরেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। মাঝে ওয়ানডে সিরিজটা ভালো না কাটলেও টি-টোয়েন্টিতে লিখেছে নতুন ইতিহাস। উইন্ডিজের মাটিতে এই প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
রান তাড়ায় নেমে প্রথম দুই ওভারে ১৯ রান তোলা উইন্ডিজকে প্রথম ধাক্কাটা দেন তাসকিন আহমেদ। প্রথমবার বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই ব্রেক থ্রু এনে দেন বাংলাদেশকে। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা লেংন্থ বলে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরত যান ওপেনার ব্রান্ডন কিং (৮)। তাসকিনের একই ওভারের পঞ্চম বলে লিটনের হাতে বন্দী হন আন্দ্রে ফ্লেচার (০)।
তাসকিনের আঘাত সামলে ওঠার আগেই এবার আঘাত হানেন শেখ মেহেদী। পরপর দুই ওভারে তুলে নেন জনসন চার্লস ও নিকোলাস পুরানের উইকেট। এর মধ্যে চার্লস (১৪) এলবিডাব্লিউ হয়ে ও পুরান (৫) স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।
পাওয়ার প্লের মধ্যেই উইন্ডিজের ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের নাটাই নিজেদের হাতে নিয়ে আসে বাংলাদেশ। পরের ওভারে উইকেটের সংখ্যা বাড়তে পারত আরও একটি। তানজিম হাসান সাকিবের বলে স্লিপে ক্যাচ দিলেও সৌম্যর হাত ফসকে সে যাত্রায় বেঁচে যান রোভমান পাওয়েল।
বলটি সৌম্যর আঙুলে আঘাত করে। ব্যথায় কুকড়াতে থাকা সৌম্যকে পরে ফিজিও এসে উঠিয়ে নিয়ে যান মাঠ থেকে। পরে সাইডলাইনের বাইরে অ্যাম্বুলেন্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় সৌম্যকে। ইয়ান বিশপ জানিয়েছেন, সৌম্যর ডান হাতে পাঁচটি সেলাই পড়েছে এবং তাঁকে এক্সরে করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জীবন পেলেও সেটা কাজে লাগাতে পারেননি পাওয়েল। হাসান মাহমুদের পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন। ৭ বলে ৬ রান করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় পাওয়েলকে।
সাকিবের পরের ওভারের প্রথম বলে রোস্টন চেসকে এলবিডাব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে এ যাত্রায় বেঁচে যান চেস। তবে উইকেটশূন্য থাকতে হয়নি সাকিবকে। ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিতে পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত উইকেটের দেখা। সাকিবের বাউন্সারে পুল খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় পাকিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন রোমারিও শেফার্ড (০)।
উইন্ডিজ ৪২ রানে ৬ উইকেট হারালে ম্যাচটা পুরোপুরি হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। আকিল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন চেস। তাকে উইকেট পড়া সাময়িক বন্ধ হলেও বাংলাদেশি বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে জয়ের জন্য ওভারপ্রতি রানের চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকে উইন্ডিজের।
১৫ ওভার শেষে স্বাগতিকদের রান ৬৬। জয় থেকে শেষ ৩০ বলে তখনো প্রায় অর্ধেক (৬৪ রান) পথ দূরে উইন্ডিজ। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সমীকরণ মেলানো কার্যত অসম্ভব ছিল উইন্ডিজের জন্য। তবে ১৬তম ওভারে হাসান মাহমুদের প্রথম দুই বলে দুই ছক্কা মেরে ম্যাচ জমিয়ে তোলার আভাস দেন চেস। হাসানের ওই ওভার থেকে ১৬ রান তোলে উইন্ডিজ। রিশাদের পরের ওভারে আকিলও একটি ছক্কা মারলে কিছুটা শঙ্কার মেঘ জমা হয়।
শঙ্কা দূর করার কাজটাও নিজের কাঁধে তুলে নেন রিশাদ। ওভারের চতুর্থ বলে দারুণ এক ডেলিভারিতে বিপজ্জনক হওয়া চেসকে (৩৪ বলে ৩২ রান) বোল্ড করেন ডানহাতি এ লেগস্পিনার। পরের বলেই তুলে নেন গুডাকেশ মোতির (০) উইকেটও।
জয়ের জন্য শেষ ১৮ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ৪১ রান। একই সমীকরণ মেলাতে বাংলাদেশের দরকার ছিল ২ উইকেট। ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে আলজারি জোসেফকে নিজেই ক্যাচে পরিণত করে সমীকরণটাকে আরেকটু সহজ করেন সাকিব। পরের ওভারে তাসকিন এসে আকিল হোসেনের উইকেট নিয়ে সমীকরণ পুরোপুরি মিলিয়ে দেন।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। এর বাইরে শেখ মেহেদী, তানজিম সাকিব ও রিশাদ ২টি করে এবং হাসান মাহমুদ ১টি উইকেট নিয়েছেন।