একদিনে তিন আন্দোলন, বিক্ষোভ-সংঘর্ঘে দিন পার করল রাজধানীবাসী
রাজধানীজুড়ে নানা উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হলো ঢাকাবাসী। শিক্ষার্থী মৃত্যু, সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে রোববার (২৪ নভেম্বর) উত্তপ্ত ছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। দিনভর ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, যানজট এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান রাজধানীতে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
পুরান ঢাকায় শিক্ষার্থীদের তাণ্ডব
পুরান ঢাকায় এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন— অভিজিৎ নামে ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কাজী নজরুল ইসলাম কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালান।
ডিএমআরসি কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করলেও পরে নটর ডেম, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজসহ অন্তত ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন। হাসপাতালের নামফলক, কক্ষ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন তারা। একই সঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে চলমান অনার্স ফাইনাল পরীক্ষাও স্থগিত করতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ।
কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা যানবাহন, ট্রফি, চেয়ারসহ অন্যান্য সামগ্রীও ভাঙচুরের শিকার হয়। পুলিশ বলেছে— ঘটনার সময় তাদের পর্যাপ্ত ফোর্স না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়েছে।
অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভে সড়কজুড়ে অচলাবস্থা
রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে গতকালও বিক্ষোভ করেন চালকরা। ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই সড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়, দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় সকাল থেকে চালকরা সড়ক অবরোধ করলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে রিকশাচালকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুলিশ ও চালকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে, মোহাম্মদপুরে বেড়িবাঁধ এলাকায় সড়ক অবরোধের ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়, যেখানে ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন চালকরা। আন্দোলনের মুখে বিকেলে সরকারের আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অটোরিকশা চালু বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আহ্বান জানান এবং সমস্যার সমাধান হবে বলে আশ্বাস দেন।
প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ
কাওরান বাজারে দৈনিক প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে ‘বাংলাদেশের জনতা’ ব্যানারে একদল মানুষ দিনভর অবস্থান ও বিক্ষোভ করেন। বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের কর্মসূচি। বিক্ষোভকারীরা প্রথম আলো পত্রিকার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলে এবং গরু জবাই করে রান্না ও খাবারের আয়োজন করে।
সন্ধ্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্দোলনকারীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও তারা তাতে সাড়া দেয়নি। পরে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিয়াউল হক জানান, কাওরান বাজারের মতো জনবহুল এলাকায় সারাদিন সড়ক অবরোধ করেও পুলিশ ধৈর্য দেখিয়েছে। তবে অনুরোধ অমান্য করায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অপর দিকে পুরান ঢাকার শিক্ষার্থী আন্দোলন, সড়কজুড়ে রিকশাচালকদের অবরোধ এবং কাওরান বাজারে বিক্ষোভ মিলিয়ে রাজধানীজুড়ে গতকাল ছিল এক বিশৃঙ্খল দিন। এসব ঘটনায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আতঙ্ক ও অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও উত্তেজনার রেশ এখনও কাটেনি।