বঙ্গভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারণ সংবিধানের লঙ্ঘন
বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানোকে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, যে সংবিধানের আলোকে উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নিয়েছে, সেই সংবিধানেই বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আবার তাঁর ছবি বা প্রতিকৃতি সংরক্ষণ বিষয়েও সংবিধানে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া আছে। এই অবস্থায় বঙ্গভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে ফেলা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।
অন্যদিকে, রাজনীতিবিদরা এটাকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের দৈন্য প্রকাশ পেয়েছে। এটা করে মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর যে অবস্থান, সেটাকে কখনোই কেড়ে নেওয়া যাবে না। আর এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু নন, আমরা নিজেরাই ছোট হয়েছি।
এর আগে বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে বলে জানান সদ্য উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া মাহফুজ আলম। গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দরবার হলের ছবি পোস্ট করে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এই তথ্য জানান তিনি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারণ সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর মধ্য দিয়ে জাতির সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। এর দায় অন্তর্বর্তী সরকার ও রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বঙ্গবন্ধু তো বঙ্গবন্ধুই। কিন্তু আমরা দেখেছি, পতিত সরকার তাঁকে নিয়ে অতিরঞ্জন করেছে। স্বৈরাচারী শাসনকে রক্ষার খুঁটি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করেছে তারা। আবার এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুকে খাটো করতে চাইছেন। আসলে এটাতে বঙ্গবন্ধুর কিছু আসে যায় না। ইতিহাস তার নির্ধারিত জায়গায়ই বঙ্গবন্ধুকে রাখবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, এ ধরনের ঘটনাকে আমরা বাড়াবাড়ি বলে মনে করি। তবে এই ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও এমনটা ঘটেছে। এই যে নামকরণ করা আর নামকরণ পরিবর্তন করা! বিশেষ করে পঁচাত্তরের পর দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একজন অনন্যসাধারণ নেতা ছিলেন– সেটাই ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার ২০০৮ সালের পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অতিরঞ্জন করা হয়েছে। এমনভাবে তাঁকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে, যেন বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কেউ আমাদের ইতিহাসে ছিলেনই না। এই এক সময় অতিরঞ্জিত করা, আরেক সময় নাকচ করে দেওয়া– দুটিই আসলে সমস্যার। এ ধরনের ঘটনা যে বা যারাই ঘটান, যে সরকারের সময়ই ঘটানো হোক, সেটা খুবই নিন্দনীয় কাজ। আমরা এটাকে সমর্থন করি না।