ম্যানচেষ্টার টু সিলেট ফ্লাইট প্রসঙ্গে কিছু কথা
ম্যানচেষ্টার টু সিলেট সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করার প্রসঙ্গে নর্থ ওয়েষ্ট বাংলাদেশী কমিউনিটির অবস্থান তুঙ্গে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে কিংবা বিমান অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে এই ফ্লাইটটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ম্যানচেষ্টার বিমান অফিসের সূত্রমতে আগামী মার্চ মাসের পর থেকে আর নতুন কোন টিকেট বুকিং নেওয়া হবে না। তার মানে পরিস্কার ফ্লাইটটি বন্ধ হতে যাচ্ছে।
শেখ জাফর আহমদের ছবি।
আসুন একটু পিছনের দিকে যাই। ২০২০ সালের আগে যখন ম্যানচেষ্টার শুধু বিমান অফিস ছিল কিন্তু কোন ফ্লাইট ছিল না, তখন এই নর্থ ইংল্যান্ডের অনেক সুশীল সমাজ মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন বিমান অফিসের বিরুদ্ধে, এই অফিসের দরকার কি? এই কর্মচারীরা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন, এই অফিসের ভাড়া বাবত সরকারকে অনেক টাকা গুনতে হচ্ছে, এই রকম অনেক মশকরা-তামাশা-বিদ্রুপ হয়েছে। অনেকে নিজের ফেইসবুক ঊয়ালে ব্যঙ্গ করে পোষ্ট দিয়েছেন অনেকে আবার সমর্থন ও করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেদিন আমরা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ( সরকার দল আওয়ামী লীগ সমর্থীত) বিমান অফিসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম, লেখালেখি ও করেছিলাম (যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো বিদ্যমান আছে) অনেক বিদ্রুপের ও শিকার হয়েছিলাম। আমাদের যুক্তি ছিল সরকারের অনেক টাকাই তো অনেক ভাবে খরচ হচ্ছে, না হয় আরো কিছু টাকা ম্যানচেষ্টার বিমান অফিসের পিছনে খরচ হলো, আমরা যুক্তি দিয়েছিলাম একবার যদি বিমান অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে পুনরায় বিমানের ফ্লাইট চালু করা অনেক কঠিন হবে। ফ্লাইট চালুর পূর্বশর্ত হলো অফিস থাকতে হবে-অফিসের কর্মকর্তা থাকতে হবে। সুতারাং বিমান অফিস বহাল রাখার কোন বিকল্প নেই। আলহামদুলিল্লাহ নর্থ ইংল্যান্ড বাসীর প্রচুর ক্যাম্পেইন, জোরালো দাবীর প্রেক্ষিতে, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ফ্লাইট চালু করার ঘোষনা দেন। সেই থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ম্যানচেষ্টার থেকে বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার ২৯৭ জন যাত্রী নিয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করে। সেই থেকেই মুলত ধারাবাহিক ভাবে বিমানের ফ্লাইট চালু হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমান তথাকথিত সরকার ক্ষমতা দখল করেই এই ফ্লাইটের পিছনে লেগেছে। পুরো নর্থ ওয়েষ্ট-নর্থ ইষ্ট- স্কটল্যান্ড সহ অনেক শহরের বাসিন্দা এই ফ্লাইটটিকে বেচে নিয়েছিলেন, কিন্তু এমন অযুক্তিক সিদ্ধান্ত শুধু সিলেট বাসীকে নয় পুরো বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আমার আফসোস হয় যারা একসময় বিমান অফিসের পক্ষে ছিলেন না, বিমান অফিস নিয়ে যারা বিদ্রুপ করেছিলেন, সরকারের উপরে যাদের কোন আস্থা কিংবা ভরষা ছিলা না, তারা এখন খুব সচ্ছল, প্রতিনিয়ত আন্দোলন করছেন, সংগ্রাম করেছেন প্রতিবাদ করছেন খুব ভালো কথা, করা তো অবশ্যই দরকার, ফ্লাইট অবশ্যই চালু থাকতে হবে সেটি আমার ও জোরালো দাবি, কিন্তু ভাইয়েরা সময়ের ব্যবদানে ফ্লাইট চালু করতে গিয়ে যে মানুষগুলোর অবদান ছিল, তাদেরকে এত সহজেই ভুলে গেলেন? আমরা যারা সরকার দলের কর্মী হয়েও সরকারের কাছে জোরালো দাবি রেখেছিলাম, সরকারের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম, সরকারের লওয়ার কমান্ড থেকে হাইকমান্ডে বার্তা পৌছে দিয়েছিলাম এত সহজেই এগুলো ভুলে গেলেন? দেশ-বিদেশে এই পর্যন্ত উল্লেখ্য যোগ্য যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা কিন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হয়েছে আর তার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন সেই দলের নিবেদিত কর্মীরা।
আসুন বিবেক কে নাড়া দেই-সত্যটুকু মেনে নেই। মনে রাখা উচিত-কমিউনিটির সকল স্বার্ত সিদ্ধির জন্য বিভাজন নয় ঐক্যের প্রয়োজন। বিমান চালু থাকুক এটা আমাদের সম্মিলিত দাবী।
শেখ জাফর আহমদ
ম্যানচেষ্টার-যুক্তরাজ্য।