আবারও সোহেল তাজ!
আবারও সোহেল তাজ!
মোহাম্মদ হরমুজ আলী
আচ্ছা, সোহেল তাজ যদি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবের সন্তান না হতেন তাহলে কী বগল-কাটা গেঞ্জির ফাঁকে সিক্স প্যাক শরীর নিয়ে ক'দিন পরপরই মিডিয়ার সামনে আসতে পারতেন! মানুষ কী ইন্টারেস্ট দেখাতো! মনেহয় না!
ইদানীং তাঁর কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে হয়তো তিনি তাঁর কোনো বিশেষ 'কষ্টবোধ' থেকে এভাবে বলছেন না-হয় কারো পক্ষ হয়ে এগুলো বলছেন! বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন ছিলেন দুই দেহে এক আত্মা, অন্তত বাংলাদেশের মানুষ তা-ই মনে করে এবং বিশ্বাসও করে। এমনকি বঙ্গবন্ধু সরকার থেকে তাঁর অব্যাহতির পরও মানুষ কষ্ট পেয়েছে ঠিকই তবে নিষ্ঠুর মন্তব্য করেনি, না বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, না তাজউদ্দীনকে নিয়ে! তাঁদের সম্পর্ক এমনই ছিলো - আস্থা এবং বিশ্বাসের। মানুষের মধ্যে একটা সাধারণ ধারণা ছিলো যে বঙ্গবন্ধুকে দুর্বল করার জন্যে কিছু লোকের কূটচালই এই দুরত্ব সৃষ্টির জন্য দায়ী তবে তাঁরা কেউই একে অন্যকে ধ্বংসের পথে যাবেন না। মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস তাঁরা সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধুর নামে তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন শত বাধাবিপত্তির মাঝেও, কিন্তু তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে দেশ-বিদেশের কেউ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারেনি।
'৭৫ পরবর্তীতে বেগম জোহরা তাজউদ্দীনের হাত ধরেই আওয়ামী লীগ রিভাইব করে, বিভিন্ন দল-উপদল থাকলেও এটা কাউকে অস্বীকার করতে শুনিনি। বেগম জোহরা তাজউদ্দীনের প্রতি যে কী পরিমান শ্রদ্ধাবোধ ছিলো জননেত্রী শেখ হাসিনা'র, তার উদাহরণ দিয়েই আমি এই গৌরচন্দ্রিকার ইতি টানবো। সময়টা '৯২/'৯৩ সালের কোনো এক সময়। লন্ডনের টয়েনবি হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কর্মীসভা। লন্ডন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মরহুম আবুল লেইস মিয়া, খুব সোজাসাপটা কথা বলতেন, যাঁরা তাঁকে চিনতেন, সকলেই জানেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি হঠাৎ বলে বসলেন যে আওয়ামী লীগেতো এখন শুধু মহিলাদেরই জয়জয়কার - আপনিতো (নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে) আছেনই, সাথে আছেন জোহরা তাজউদ্দীন, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, পুরুষ নেতাদের ঐভাবে সরব উপস্থিতি নাই! নেত্রী যেনো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন, বললেন - চাইলে আমাকে নিয়েও কথা বলতে পারো কিন্তু খবরদার, জোহরা চাচীকে অসম্মান করে কোনো কথা আমি সহ্য করবো না। সমস্ত হল জুড়ে যেনো হিমেল হাওয়া বয়ে গেলো!
তাজউদ্দীন-পুত্র সোহেল তাজকে শেখ হাসিনা রাজনীতিতে এনেছেন, ১৫ই আগষ্ট ও ৩রা নভেম্বরের ক্ষতিগ্রস্তদের অন্যতম এই দুইজন মানুষ, ছোট ভাই জ্ঞানে শেখ হাসিনা তাঁর সাথে অনেক কথাই বলতে পারেন, আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা'র দুর্দিনে এই কথাগুলো জনসমক্ষে এইভাবে প্রচার করে সোহেল তাজ কী প্রাপ্তি আশা করছেন! কিংবা, সাধারণ মানুষও (আমি অবৈধ মেধাবী সরকার কিংবা বিএনপি-জামাতের কথা বলছিনা) তাঁর ব্যাপারে কী ভাবছে! আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই 'meticulously planned' বলে মনে হচ্ছে! তবে যা-ই হউক, আপাত: বিজয়ীরা যেখানে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা থেকে শুরু করে বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি, কিছুই বাদ রাখছেনা, তারা মুজিবনগর সরকারেও হাত দেবে তাদের নিজস্ব আদর্শিক কারণে, তখন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদও তাদের খড়গ থেকে রক্ষা পাবেননা! এই বিষয়টা কী একবারও সোহেল তাজের মাথায় আসছেনা! না-কি প্রয়োজনে তিনি তাঁর বাবার রাজনীতির বিরুদ্ধেও অবস্থান নিবেন!
পরিশেষে আমি একটি আবেদন রাখতে চাই, বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনা এক নয়। শেখ হাসিনা কোন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং কী বীভৎসতার মধ্যে দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে আর আওয়ামী লীগ যেহেতু বাঙালিদেরই একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, বাঙালি চরিত্রের সকল দোষগুণ থেকে এই প্রতিষ্ঠানও মুক্ত নয়। সুতরাং শেখ হাসিনা'র সকল সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনায় নিয়ে তাঁর সমালোচনা করুন, আমি বা আমাদের কিছুই বলার থাকবেনা। শুধু জিঘাংসায় বশবর্তী হয়ে এই জাতির শেষ আশ্রয়টুকু ধ্বংস করে দেবেন না। তিরিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষাধিক সম্ভ্রমহারা মা-বোনের প্রতি দায় যেমন বঙ্গবন্ধুর, তাজউদ্দীন আহমদের দায়ও কিন্তু কম নয়! মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ না থাকলে আমরা কেউই থাকবো না। না বঙ্গবন্ধু, না তাজউদ্দীন! না শেখ হাসিনা, না সোহেল তাজ! আমার বিশ্বাসের জায়গাটা খুবই স্পষ্ট।
*১০ই জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর চির বিশ্বস্ত তাজউদ্দীন আহমদ (বঙ্গবন্ধুর ডানে)