কর্মবিরতিতে ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,
সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষিত ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে আজ (১ জুলাই) থেকে একযোগে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, শিক্ষকদের এ আন্দোলনের দিকে নজর রাখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে যথাসময়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার (৩০ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে সেশনজটে পড়লে মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে তারা আন্দোলন করছেন। সেই অধিকার তাদের আছে। অনেকে বলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। এ আন্দোলনের মাধ্যমে তো এটা বোঝা যাচ্ছে যে, তারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি। এখনো সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হয়নি। তাদের কর্মসূচি শুরু হোক, পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা পদক্ষেপ নেব।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশনের আওতায় কারা আসবে, সেটা সরকারের নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটার সঙ্গেই আছে। শিক্ষকরা দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে জানাচ্ছেন, সরকারই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখানে কিছু করার নেই।’
এর আগে একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ফটকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মবিরতির কথা জানান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া।
এর আগে একই দাবিতে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা মোট তিনটি দাবি জানিয়েছেন। এগুলো হলো- প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল।
লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং আজ ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৩ মার্চ প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এর বিরুদ্ধে সরব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। কিছু কর্মসূচি পালনের পর ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা৷ এরপরও দাবির বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না দেখে ৪ জুন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গত সপ্তাহে টানা তিনদিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এতদিন কর্মবিরতি পালিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষাগুলো এর আওতার বাইরে ছিল। কিন্তু আজ থেকে যে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হচ্ছে, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন শিক্ষকেরা।