ইউরোপজুড়ে মানবপাচার বিরোধী অভিযান, পাঁচ দেশে গ্রেপ্তার ২০
যুক্তরাজ্য এবং জার্মানিতে শত শত সিরিয়ান অভিবাসী পাচারে জড়িত একটি চক্রকে ভেঙে দিতে আন্তর্জাতিক অভিযান পরিচালনা করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)৷ পাঁচটি দেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সন্দেহভাজন ২০ জন মানবপাচারকারীকে৷
ইউরোপজুড়ে মানবপাচারে জড়িত সিরিয়ান নাগরিকদের একটি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল জার্মানি৷ সেই তদন্তে সহযোগিতা দিয়ে আসছে এনসিএ৷ তদন্তের অধীনেই যুক্তরাজ্যের উলভারহ্যাম্পটনের বিলস্টনের বাড়ি থেকে এক ইরাকি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে এনসিএ।
ইউরোপোল এবং ইউরোজাস্টের সমন্বয়ে বুধবারের এই অভিযানে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গোটা ইউরোপজুড়ে অন্তত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ অভিযানে এনসিএ এবং জার্মান পুলিশের সঙ্গে অংশ নিয়েছে অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনা এবং সার্বিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো৷
গত বুধবারের অভিযানে জার্মানি থেকে চার জন, অস্ট্রিয়া থেকে ছয় জন, সার্বিয়া থেকে ছয় জন এবং বসনিয়া থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
নেদারল্যান্ডসে তল্লাশি চালিয়ে ফোন, কম্পিউটারসহ গাড়ি, নগদ অর্থ ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে৷
এনসিএ জানিয়েছে, মানবপাচারকারী সন্দেহে আটক ২০ ব্যক্তি অন্তত ৭৫০ জন সিরীয় অভিবাসীকে যুক্তরাজ্য এবং জার্মানিতে পাচার করেছে৷ প্রত্যেক অভিবাসীর কাছ থেকে সাড়ে চার হাজার থেকে ১২ হাজার ইউরো পর্যন্ত আদায় করেছে তারা৷
ধারণা করা হয়, ২০২১ সাল থেকে ইউরোপের ২০টি দেশে সক্রিয় রয়েছে এই নেটওয়ার্কটি৷ অভিবাসীদের জার্মানিতে পাচারের আগে বলকান অঞ্চল হয়ে পূর্ব ইউরোপে নিয়ে আসা হতো৷ এই চক্রটি একসঙ্গে অন্তত একশ মানুষকে পাচার করেছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে৷ এদের মধ্যে যাদের গন্তব্য যুক্তরাজ্য, তাদের নেদারল্যান্ডস হয়ে নৌকার মাধ্যমে পাঠানো হয়৷
অভিযানের অংশ হিসাবে বিলস্টনের নিজ বাড়ি থেকে ৩৫ বছর বয়মি ইরাকি নাগরিক হুসাম আল রামলিকে গ্রেপ্তার করে এনসিএ৷ এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘‘ওই ব্যক্তি অভিবাসীদের অনিয়মিতভাবে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে নিয়ে আসতো এবং সেখান থেকে তাদের জার্মানির পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতো৷’’
অভিবাসী পাচার সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন ইন্টারনেটে প্রচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ ওই ইরাকি নাগরিককে গ্রেপ্তারের সময় এনসিএ-এর সঙ্গে পোলিশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পোল্যান্ডের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিল ইরাকি নাগরিক আল রামলির নাম৷ তাই তাকে ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করে পোল্যান্ডে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে৷
এনসিএ-এর পরিচালক (তদন্ত) জন ডেনলি বলেন, এটি একটি বড় অভিযান ছিল৷ মানবপাচারে জড়িত ভয়ংকর একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ককে টার্গেট করেই কয়েকটি দেশে অভিযান পরিচালিত হয়েছে৷ যার অংশ হিসাবে যুক্তরাজ্যেও অভিযান চালানো হয়েছে৷
তিনি আরো বলেন, ইরাকের ওই নাগরিকের বিচার এখন পোল্যান্ডের আদালতে হবে৷ এই অভিযান পরিচালনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷
জন ডেনলি বলেন, ‘মানবপাচার চক্র ভেঙে দেয়া এনসিএ-এর প্রধান অগ্রাধিকার৷ মানবপাচারে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি৷’
তিনি বলেন, যারা আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে, যারা মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে, যারা মানুষের জীবনকে পণ্য হিসাবে দেখে, তাদের গুঁড়িয়ে দিতে ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা আমাদের লক্ষ্য৷
সীমান্ত নিরাপত্তা ও আশ্রয় বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা ঈগল বলেন, যেখানে অপরাধী নেটওয়ার্কের খোঁজ মিলবে, সেখান থেকেই তাদের সমূলে ধ্বংস করার অভিযানে আমরা কোনোভাবেই থামব না৷